শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের বাকি আর মাত্র চারদিন। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। শুক্রবার সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে দলটির ৮১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে ।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ও সাংগঠনিক প্রতিবেদনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। ৪১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ, ১৮০ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় কমিটি এবং ১৯ সদস্যবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার ও ১১ সদস্যবিশিষ্ট সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এসব কমিটির অনুমোদন হতে পারে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা যুগান্তরকে এসব তথ্য জানান।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। সারা দেশে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। সেগুলো আসতেও শুরু করেছে। মঞ্চের প্রস্তুতিও শেষের দিকে। প্রচার, প্রকাশনা ও সাংগঠনিক প্রতিবেদনগুলোও প্রায় শেষের দিকে। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, স্থানীয় সরকার/পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ মনোনয়ন বোর্ড এবং সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড গঠনের কাজও প্রায় শেষ। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এসব কমিটি গঠন করছেন। ২১ ডিসেম্বর কাউন্সিল অধিবেশনে তা প্রকাশ করবেন তিনি।
২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে দলের কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এদিন ৮১ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামী লীগের কমিটির ২৩ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৫ অক্টোবর ২২ জন সম্পাদকমণ্ডলীর নাম ঘোষণা করা হয়। ২৯ অক্টোবর চারটি পদ শূন্য রেখে কমিটির অন্যসব পদে নাম ঘোষণা করা হয়। গত সম্মেলনে ধাপে ধাপে কমিটি গঠন করা হলেও এবার একসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
২১তম সম্মেলনের আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে দাওয়াতপত্র পৌঁছে দেয়া, মঞ্চ ও সম্মেলনস্থল প্রস্তুত করা এবং সাজসজ্জাসহ অন্যসব কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চার কোটি টাকা বাজেটের এ সম্মেলনে কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ ৫০ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন। এবার বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সম্মেলন সামনে রেখে দলীয় সভাপতির ধানমণ্ডি কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সমাগম বাড়ছে। মুখরিত ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও। প্রায় প্রতিদিন সেখানে কোনো না কোনো উপকমিটির বৈঠক হচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে ছয়টি নৌকা। কোনোটা কালো রঙে আচ্ছাদিত আবার কোনোটা তৈরির কাজ চলছে। উদ্যানের গাছে গাছে লাগানো হচ্ছে মরিচবাতি। কেউ কেউ মাইক লাগানোয় ব্যস্ত। কেউ বিভিন্ন ধরনের বিলবোর্ড ও ফেস্টুন তৈরি করছে। সেখানে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও চোখে পড়ে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগাতে দেখা যায়। মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। পাশাপাশি লাগানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রসংবলিত ফেস্টুন।
মঞ্চ ও সাজসজ্জা : আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের মূল মঞ্চ এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। ১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে চার সহযোগী এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলন। সেই একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। তবে মূল মঞ্চ এক হলেও সেটাকে সাজাতে নেয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা।
জানা গেছে, আশপাশের এলাকাসহ মূল মঞ্চটি এমনভাবে স্থাপন করা হবে, যেন পদ্মা নদীর বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে বিশাল এক নৌকা। সেই নৌকার চারপাশজুড়ে থাকছে প্রমত্ত পদ্মার বিশাল জলরাশি। এর মধ্যে থাকছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুও। এছাড়া পদ্মার জলতরঙ্গ, পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট নৌকা, এমনকি চরের মধ্যে কাশবনের উপস্থিতিও থাকবে। মহান বিজয়ের মাসে আয়োজিত এ সম্মেলনে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতিও থাকবে। এর পেছনে থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। নৌকার পেছনের দিকে থাকবে জাতীয় চার নেতাসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে বিভিন্ন সময়ে অবদান রাখা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছবি। এছাড়া সম্মেলনস্থলে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের ফেস্টুন ও উন্নয়নের ছবি থাকবে।
সম্মেলনস্থলে নেতাকর্মীদের প্রবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঁচটি গেট থাকবে। একটি গেট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। ৮১ সদস্যের মধ্যে চারটি পদ শূন্য থাকায় মূল মঞ্চে চেয়ার থাকবে ৭৭টি। মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের জন্য চেয়ার থাকবে ৩০ হাজার। এছাড়া সম্প্রসারিত মঞ্চে ১৫ হাজার চেয়ার দেয়া হবে। ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং মঞ্চ ও সাজসজ্জা কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, এবারের সম্মেলন জাঁকজমকপূর্ণ নয়, বরং সাদামাটাভাবে আয়োজন করা হবে। সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে কোনো ধরনের সাজসজ্জা হবে না। সম্মেলনে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার কাউন্সিলর, ডেলিগেটস ও নেতাকর্মী অংশ নেবেন।
অভ্যর্থনা : বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ অন্যসব পেশার বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এরই মধ্যে অতিথিদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। পাঁচ হাজার বাংলা কার্ড ও এক হাজার ইংরেজি কার্ড তৈরি করা হয়েছে। অতিথিদের দাওয়াতপত্র পৌঁছে দিতে ৭-৮ জনের আলাদা গ্রুপ করা হয়। অতিথিদের কাছে তারা দাওয়াতপত্র পৌঁছে দিয়েছেন।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং অভ্যর্থনা কমিটির সদস্য সচিব ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে যেমন বিমানবন্দর, বাস ও রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড ও ব্যানারের মাধ্যমে অতিথি ও কাউন্সিলরদের স্বাগত জানানো হবে।
প্রচার ও প্রকাশনা : সম্মেলন সামনে রেখে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে দুটি স্লোগানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। একটি ছিল- ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বৃত্তায়নমুক্ত রাজনীতি/উন্নয়নের বাংলাদেশে থাকবে না আর দুর্নীতি।’ আরেকটি ছিল- ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে গড়তে সোনার দেশ/এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ।’ এই দুটি স্লোগানের মধ্যে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় স্লোগানটি চূড়ান্ত করে দেয়ার পর পোস্টার ছাপা হয়। এরই মধ্যে জেলা ও মহানগরগুলোয় পোস্টার পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
সম্মেলনে প্রচার উপকমিটির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার একটি কার্ড থাকবে। একই সঙ্গে থাকবে দুটি সিডি। একটিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এবং অন্যটিতে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের পাটের ব্যাগে এগুলোর সঙ্গে একটি প্যাড ও একটি কলম দেয়া হবে। এরই মধ্যে ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ওয়েবপেজ উদ্বোধন করেছে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি। ওয়েবপেজের ভিডিও অংশে সম্মেলন লাইভ করা হবে।
গঠনতন্ত্র : ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে বেশকিছু পরিবর্তন আসছে। এর মধ্যে রয়েছে- কেন্দ্রীয় কমিটির মতো জেলা-উপজেলা কমিটিতে উপদেষ্টার সংখ্যা নির্দিষ্ট করা, আইনজীবীদের সংগঠন ‘আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’র নামের স্থানে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ করা। প্রাথমিক সদস্য পদের ফরমে মোবাইল ফোন নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সংযুক্ত করা। এছাড়া কিছু শব্দ ও ভাষাগত পরিমার্জন আসবে গঠনতন্ত্রে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র উপকমিটির সদস্য সচিব আফজাল হোসেন বলেন, এবার গঠনতন্ত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না। দু-একটি বিষয় সময়োপযোগী করা হবে।
সম্মেলন উপলক্ষে ১০০ চিকিৎসক নিয়ে ১২টির মতো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত করছে স্বাস্থ্য উপকমিটি। প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে খাদ্য উপকমিটি। দুপুরে ৪৫ হাজার নেতাকর্মীকে খাবার দেয়া হবে। খাবারে মোরগ-পোলাওয়ের সঙ্গে ডিম, ফিরনি ও পানির বোতল থাকবে। আন্তর্জাতিক উপকমিটির পক্ষ থেকে সম্মেলন স্থানে কূটনীতিকদের জন্য বিশেষ স্টল স্থাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটি সম্মেলনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
২০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ২৫ মিনিটের একটি উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। সেখানে তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং সংগঠনকে গতিশীল করতেই এবারের সম্মেলন।
Leave a Reply